aparajita

magazine

বুধবার, ২০ মে, ২০২০

তুমি রবে নীরবে



তুমি রবে নীরবে


এই সময় ,খুব দুঃসাময়৷ এক অজানা আতঙ্ক পুরো পৃথিবীতে তাড়া করছে! বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ বলা যায়৷ করোনা৷ এমন ভাইরাস ,যা পুরো পৃথিবীকে থামিয়ে দিয়েছে! স্থির,বধির করে দিয়েছে৷ পৃথিবীতে মানুষের কাছে এখন শুধু অতীত আছে৷ বর্তমান যেনও ভঙ্গুর,তা ভেঙে যেতেই পারে৷ ভবিষ্যত মানুষ ভেবে উঠতে পাচ্ছেনা৷এটাইতো অনিশ্চয়তা৷ জীবন অনিশ্চয়তায় ভরা৷ এই যে আচমকা যা ইচ্ছা ঘটে যেতে পারে, এমনটাতো নতুন নয়৷ আমরা করোনা নিয়ে খুব বেশী ভয় পাচ্ছি? এই প্রশ্নের উত্তর,সময়ের কাছে আছে৷এটা ঠিক  পৃথিবীতে প্রথম বিশ্বের দেশে করোনা  মানসিক,শারীরিক এবং আর্থিক বিপর্যয় ৷অনেক প্রাণ ঝরে গিয়েছে৷অনেক স্বপ্ন থেমে গিয়েছে৷অনেক অভিমান ,প্রকাশ না পেয়েই হারিয়ে গেলো!


প্রথম বিশ্বের এই আঘাত উন্নয়নশীল দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিকেও প্রভাবিত করেছে৷আমরা জানি করোনা পরবর্তী পৃথিবী,অদ্ভুত ভাবে পরিবর্তন হবে৷ এই পরিবর্তন আমরা সাইন্স ফিকশনের দৃষ্টিতে খানিক কল্পনা করতে পারি, যদিও সাইন্স ফিকশন মানে সবসময় আরো উন্নত,প্রযুক্তিনির্ভর জগতের স্বপ্ন দেখায়৷এর পাশাপাশি সাদার পাশে কালো,দিনের সাথে রাতের মতন; প্রযুক্তির আলোর মধ্যেই থাকবে পরাজিত মানুষদের অন্ধকার৷ বিশ্ব আর্থিক ভাবে পিছিয়ে যাবে৷ এমনটা হতেই পারে,অন্তত বিশ্বে বেকারত্ব, গরিবি যেমন ভাবে বাড়বে,মানে সমাজ বিজ্ঞানীদের  আগাম ইঙ্গিতে তা উঠে আসছে৷



আচ্ছা এই সময় শিল্প,সাহিত্য, গান,চলচ্চিত্র , মানুষের সৃষ্টিশীলতা--মানুষের অসহায়তা নিয়ে কথা বলবে না? চিরটাকাল অসহায় মানুষের হয়ে প্রতিবাদ করেছে, মানুষের সৃষ্টি৷সম্প্রতি শঙ্খদীপ চক্রবর্তীর ছবি                    "তুমি রবে নীরবে"-সেই কথাই বলছে৷ অভিনয় করেছেন চন্দন ব্যানার্জী, নবাগতা মিতালী ভট্টাচার্য, বিশ্বলাল ব্যানার্জ্জী সহ প্রমুখেরা।

মানুষের সৃষ্টিশীলতা কখনো থেমে থাকেনা৷মানুষ স্বপ্ন দেখে৷মানুষ স্বপ্ন ছাড়া বাঁচতে পারেনা৷ কখনোই কোনো যন্ত্রনার বিনিময়ে হলেও, মানুষের নিজের স্বপ্নকে ত্যাগ করতে নেই৷ এই অন্ধকার সময়ে,স্বপ্নের সাথে প্রেমের সম্পর্ক নিয়েই স্বল্প দৈর্ঘ্যের  ছবি করেছেন শঙ্খদীপ৷

"তুমি রবে নীরবে" র নায়ক ,আমার আপনার মতন নিম্ম মধ্যবিত্ত ঘরের৷ কাব্য উত্তর কলকাতার ঘিঞ্জি পাড়ার ছেলে৷তার বাবা কারখানার কর্মী৷ ভাগ্যের পরিহাসে  আচমকাই ,বিনা নোটিসে বাবা মারা যায়!এটা তো সবেমাত্র অনিশ্চয়তার শুরু! কাব্যর হাতে তখন অনেক সময়,সারাদিন খালি সময় আর সময়৷ সে বেকার৷ভারতবর্ষ ,বিশেষত এই বাংলার যা অত্যন্ত পরিচিত চালচিত্র৷


এক দিশাহীন পরিস্থিতি থেকেই কাব্যর অভিভাবকহীন জীবন চলা শুরু হলো৷তার হাতে কাজ নেই৷সম্বল বলতে ব্যাঙ্কের খুব সামান্য পুঁজি৷দায়িত্ব বলতে বৃদ্ধ মা আর কলেজে পড়া বোন৷ নিজের সংসারের তাগিদে কাব্য চাকরীর সন্ধানে  ঘুরতে শুরু করলো৷ এখান দিয়েই শুরু হলো তার জীবনে আরেকটি পর্ব, অনেক পরিচিত মানুষদের মুখ চিনতে পারলো৷ বাবার মৃত্যুর পরিবর্তে,যে চাকরী তার প্রাপ্য ছিলো, সেই প্রাপ্যটুকু সে পেলো না৷ সমাজের রাজনৈতিক নোংরামোর শিকার কাব্য৷ বেকার ছেলে, জীবনে বাবাকে হারিয়ে,নিজের ভরসার স্তম্ভ ভেঙে যেতে দেখেও,চাকরীটি পাওয়ার জন্য লড়তে থাকলো৷চেষ্টা চালিয়ে গেলো৷ শেষ অব্দি ব্যর্থ হলো৷

কাব্য এখানে থেমে ছিলোনা৷ চাকরীর জন্য পরিচিতদের দরজায় দরজায় ঘুরতে লাগলো দিনের বেলায়৷ রাতে সে প্রযুক্তিগত সামাজিক মাধ্যমে ,নিজের স্বপ্নের চর্চা করতো৷কাব্য ,কবি হতে চায়৷ সে ফেসবুকে নিজস্ব পেইজে কবিতা লিখে পোস্ট করতো৷তার কবিতার অনেক  প্রশংসক জুটতে লাগলো৷জীবনে যতই পরাজিত হোক, কবিতা ছিলো তার স্বপ্ন৷ সে সবসময় কবিতায় জীবনের কথা বলতো৷আশার কথা বলতো৷ এদিকে সংসারে প্রতিদিন অভাব রয়ে গিয়েছে৷ এরপর সেও অনেক চেষ্টা করছে নিজের প্রিয় আদুরে বোনের জন্য  কিছু একটা করবার চেষ্টা৷ সব কিছুই তার বিরুদ্ধে৷ অনেক চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ৷একদিন সে ভাবলো কবিতা লেখা ছেড়ে দেবে৷ আত্মহনন এর পথ বেছে নেবে৷ তেমন  মনসিক বার্তা  নিয়েই  লেখা , তার কবিতা গুলো ,পেইজে পোস্ট হতে থাকে৷


কাব্য বছর তিরিশের যুবক৷ চাকরীপ্রার্থী৷ সে কবিও৷ নিজের অবস্থার কাছে হার মানতে না চাইলেও আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি  নেয়৷ এমন সময় কাব্যের সাথে পরিচয় হয় বীথির৷ এই গল্পের নায়িকা বীথি৷ সে কাব্যকে নতুন ভাবে বাঁচতে শেখায়৷ এই যে বাঁচবার পথ, বীথির সাথে নাটকীয় পরিচয়, তাদের ভালোবাসা,খুনসুটি, অভিমান -সব কিছুই খুব পরিচিত বলে মনে হবে  দর্শকদের৷ তবুও আমরা অপরিচিতের মতন হারিয়ে যেতে চাইবো৷এই গল্পের এখানেই বিশেষত্ব৷

কাব্য আর বীথি পরস্পরকে ভালোবাসে,তাদের ভালোবাসা এখন সম্পর্কের স্বীকৃতি পাবে৷কাব্য সেই আশা নিয়ে বীথির কাছে যায়৷ বীথি ফিরিয়ে দিলো! গল্প পরিচিত হয়েও, সম্পূর্ণ অনিশ্চিত, অনিশ্চয়তার দিকে তার গতি পরিবর্তন করলো৷ কাব্য কাঁদছে৷এই গল্পে,বীথির ফিরিয়ে দেওয়ার যন্ত্রনা, কাব্যর কাছে সব যন্ত্রনার থেকেও যন্ত্রনাপ্রবল হয়ে উঠেছে৷ বীথি যে কাব্যকে ,কবি হয়ে উঠবার জন্য, চারপাশের কষ্ট থেকেও সৃষ্টির আনন্দ উপভোগ করবার ফরমূলা বলে দিয়েছিলো৷ আজ বীথিই ,কাব্যকে দূরে  সড়িয়ে দিলো!


গল্প আবার বাঁক নিলো৷ বীথি ,কাব্যকে এক রবিবার সকালে  নিজের বাড়িতে আসবার নিমন্ত্রণ জানালো৷ সেখানে গিয়ে , কাব্য অন্য এক পৃথিবীর সাথে পরিচিত হলো৷ সেটাই বীথির পৃথিবী৷ এই পৃথিবীতে বীথি আর তার ভালোবাসা থাকবে৷ সেই ভালোবাসা কাব্যের মতন সংগ্রামী প্রেমিকদের জন্য৷ কাব্যর কবিতার পবিত্র ফুল আজ শুধুই  মৃত্যুর পথে এগিয়ে চলা, ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত   প্রাণবন্ত মেয়ে বীথির জন্য৷ গল্পের শেষ দৃশ্যে বীথির মৃত্যু ঘটবে৷কাব্যর কোলেই তার অন্তিম নিঃশ্বাস মিশে যাবে৷কাব্যকে  সে  শিখিয়ে দিয়ে গেলো, জীবনের অন্ধকারময়  যন্ত্রনা থেকেই  সৃষ্টির রশদ খুঁজতে হয়৷ আমাদের জীবনে অনিশ্চয়তা আছে,তাই সেই জীবন এতো সুন্দর, এতো সৃষ্টিশীল৷ 

প্রিয়জনের মৃত্যু ,যন্ত্রনা দেয়৷ অনেক সময় সেই যন্ত্রনার ভিতরেই  জীবনের উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকে৷এই গল্প সম্পূর্ণ ভাবে ঈশ্বর মুখরিত গল্প, অথচ সেখানে প্রবল ভাবে সৃষ্টি,প্রকৃতি,উল্লাস, প্রেরণা, ভালোবাসা, দৃঢ়তা, খোঁজ, আত্মত্যাগের সহাবস্থান ঘটেছে৷এইসব কিছু মিলেমিশে এমন এক পৃথিবীর সন্ধান পাবো, যেখানে মুক্তি রয়েছে৷আমরা গোটা জীবনে মুক্তিই খুঁজছি৷

1 টি মন্তব্য: